
কোরবানির পশুকে কোরবানির আগের রাত ১০টার পর থেকে একমাত্র পানি ছাড়া কোনো প্রকার খাদ্য খাওয়ানো যাবে না,প্রচুর পরিমানে পরিষ্কার পানি পান করাতে হবে।শীতকাল হলে পানি হালকা গরম করে নিতে হবে।
সকালবেলা কোরবানি করার কিছুক্ষন আগে হালকা গরম পানির সাথে পরিমান মতো লবন দিয়ে সেই পানি খাওয়াবেন,এতে চামড়া ছাড়াতে সুবিধা হয়।
সকালে ঈদের নামাজ আদায় করতে যাবার আগে কোরবানির পশুকে খুব ভালো করে সাবান দিয়ে গোসল করাতে হবে।
পশুকে কোরবানি করার মুহূর্তে তাকে শোয়ানোর জন্য ৩০ ফুট লম্বা নরম সুতা বা পাটের তৈরি ২০ হাত রশি দিয়ে বেঁধে শোয়াতে হবে। কোনো অবস্থাতেই নাইলনের দড়ি ব্যবহার করা যাবে না।এতে চামড়ায় ক্ষত হবে এবং যারা পশুকে শোয়াবে, তাদের হাত ও রশির টানে ছুলে যেতে পারে।
জবেহ করার স্থানটিতে ঠিক গলার নিচে দেড় ফুট গভীর ও দেড় ফুট আড়ে ও লম্বায় একটি গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে পশুর রক্ত ঝরাতে হবে।
এমনভাবে পশুকে রাখতে হবে, যাতে গর্তে সম্পূর্ণরূপে রক্ত ঝরে পড়ে।
জবেহ করার পর পশুকে টানা-হেঁচড়া না করে উঁচু করে সরিয়ে জবেহ করার স্থান থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে চামড়া ছাড়াতে হবে। চামড়া ছাড়ানোর পদ্ধতি এবং যেসব অস্ত্রপাতি ব্যবহার করা হবে, তা অন্তত তিন দিন আগে প্রস্তুত করে রাখতে হবে। চামড়া ছাড়ানোর কাজে অবশ্যই আগা ভোতা (নেকদার) ছুরি ব্যবহার করতে হবে।
পশুকে জবেহের পর গলার কাটা অংশ থেকে গলকম্বলের নিচ সামনের দুই পায়ের মধ্যখানের সিনা পর্যন্ত ফেড়ে সামনের দুই পায়ের সম্মুখভাগ দিয়ে দুই হাঁটু পর্যন্ত ছুরির মাথা দিয়ে ফেড়ে নিতে হবে। পশুকে চিত করে শুইয়ে বুকের সিনা থেকে পেটের মাঝখান দিয়ে মলদ্বার পর্যন্ত ছুরির মাথা দিয়ে ফেড়ে পেছনের দুই পায়ের পেছন দিক দিয়ে দুই হাঁটু পর্যন্ত ফেড়ে ফেলতে হবে। এর পর ধীরে ধীরে খুব সতর্কতার সাথে দেহের চামড়া ছাড়াতে হবে।
চামড়া ছাড়ানোর সময় চামড়ার সঙ্গে কোনোভাবেই যেন অতিরিক্ত মাংস আটকে না থাকে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
মাথার চামড়া শরীরের মূল চামড়ার সঙ্গেই রেখে ছাড়াতে হবে, পৃথক করা যাবে না।
চামড়া রোদে না শুকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পরিষ্কার পানি দ্বারা ভালোভাবে ধুয়ে ঝুলিয়ে রেখে পানি ঝরিয়ে নিয়ে কাপড় দিয়ে ঘসে শুকিয়ে ফেলতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, তা যাতে জিআই তারে ঝুলিয়ে রাখা না হয়। দড়িতেও দীর্ঘক্ষণ ঝুলিয়ে রাখা যাবে না।
লবণ দিয়ে চামড়াকে সংরক্ষণের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে শীতের দিন সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টা ও গরমকালে সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টার মধ্যে চামড়ার ভেতরের অংশে ভালোভাবে লবণ ছিটিয়ে ভাঁজ করে সংরক্ষণ করতে হবে সঠিক সময়ে।
গরুর চামড়া প্রতি পাঁচ কেজি, মহিষের চামড়া প্রতি ৭.৫ কেজি এবং ছাগল/ভেড়ার চামড়া প্রতি ১.৫ কেজি লবণ মাখাতে হবে।
আমাদের দেশে ঈদে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ ও অদক্ষ ব্যক্তিরা চামড়া ছাড়ানোর কাজটি করেন, এতে চামড়ার গুণগতমান খারাপ হয়ে থাকে। তাই অভিজ্ঞ লোকের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভালো মানের চামড়া তৈরি করা সম্ভব। পশুর শরীরের সঙ্গে শক্তভাবে লেগে থাকা অংশ, যেমন—চুট ও এর চতুর্পাশ, মেরুদণ্ড বরাবর, পেছনের দুই পায়ের রানের বহিরাংশের উপরিভাগ ও এর সংযোগস্থল একাধিকবার ছুরির চোখালো মাথা দিয়ে ঘন ঘন টান দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে ওই অংশগুলোর শক্ত চামড়া কেটে যায় বা হালকা হয়ে যায় এবং দেখতে হয় খাঁজ খাঁজ ভাঁজের মতন (লেজকাট)। এই চামড়া ট্যানারিতে প্রক্রিয়াজাত করা হলেও এর খুব কম অংশই ব্যবহার উপযোগী বা রপ্তানিযোগ্য হয়।